ব্রাজিল ফুটবল দলের কথা মাথায় এলে সবার আগে চোখে ভাসে সাম্বা নৃত্য। যে নৃত্যের তালে তালে মাঠে প্রতিপক্ষ নাকানিচুবানি খাওয়ায় ব্রাজিল। এখন সেসব সোনালি অতীত। ব্রাজিলের পাঁচ বিশ্বকাপ আছে, সবচেয়ে বেশি। সর্বকালের সেরা ফুটবল দলও তারাই। কিন্তু, বর্তমান ব্রাজিলের অতীতের সেই সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারছে কই? ব্রাজিলকে বলা হয় কিংবদন্তি তৈরির কারখানা।
সেই পেলে থেকে শুরু। পেলে, গারিঞ্চাদের টানা তিন বিশ্বকাপ জয়ের লিগ্যাসি ধরে রেখেছিল ৯৪ এর রোমারিও, রিভালদো, কাফুরা। সেখান থেকে রোনালদো, রোনালদিনহো, রিভালদো হয়ে কাকা, রবিনহো, মার্সেলো, দানি আলভেজ, থিয়াগো সিলভা। নামের অভাব ছিল না ব্রাজিলে। যেমন নাম, কাজেও তেমন কার্যকর। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে নেইমার এসেছেন। চোট জর্জর নেইমার দলকে বিশ্বকাপ এনে দিতে না পারলেও প্রথমবারের মতো অলিম্পিকের স্বর্ণপদক, কোপা আমেরিকা ঠিকই জিতিয়েছেন। অথচ, সেই ব্রাজিলের এখন যায় যায় অবস্থা।
২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে বেহাল দশা তাদের। ছয় ম্যাচ শেষে আছে ছয় নম্বর পজিশনে। তারচেয়েও ভয়ানক বিষয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছিটেফোঁটা নেই সেলেসাও শিবিরে। বাছাইপর্বে হেরেছে টানা তিন ম্যাচ। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ঘরের মাঠে সর্বশেষ ম্যাচ হেরেছে, যা কি না ৬৯ বছর পর নিজ দেশে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে হারের লজ্জা। ভাবা যায়, কতটা অধঃপতন ঘটেছে এই দলের?
না রক্ষণ, না মাঝমাঠ, না আক্রমণ- কোথাও ব্রাজিলসুলভ খেলা নেই। হলুদ জার্সিতে প্রতিম্যাচেই যেন অচেনা এক দল মাঠে নামে। আর পরিণতি হার। যে ব্রাজিলকে সুন্দর ফুটবলের জন্য কোটি ফুটবলপ্রেমি ভালোবাসে, তাদের সৌন্দর্যও যেন বিলীন হয়ে গেছে। ২০০২ সালে সর্বশেষ ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ের পর আরও পাঁচটি আসর, বিশটি বছর কেটেছে, বিশ্বকাপের দেখা আর মেলেনি।
বড়দের হতাশা মিটিয়েছিল ছোটরা। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। কিন্তু হায়! এই দলটিও চলতি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে। ৩-০ গোলে হেরেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে সিনিয়র-জুনিয়র দুটো দলই হার মেনেছে আর্জেন্টাইনদের কাছে, যা আরও বেশি করে পোড়াচ্ছে ভক্তদের।
সুন্দর অতীত মনে দোলা দিয়ে যায়। তবে, বর্তমানে তা কতটা কার্যকর? নিষ্ফল এক ব্রাজিলকে দেখছে বিশ্ব, নিয়মিতই যাদের হচ্ছে অবনতি। একটা সময় বলা হতো, ব্রাজিলের বেঞ্চও যে কাউকে হারাতে যথেষ্ট। আর এখন? মাঠের মূল এগারোজনই পেরে ওঠে না সহজ প্রতিপক্ষের সঙ্গেও। তবু, পাঁচ বিশ্বকাপের জাবর কাটা বন্ধ হবে না। ভক্তরাও হয়তো বুঝে গেছে, এই ব্রাজিলের ঘুরে দাঁড়াতে অনেক দিন লাগবে!