ফ্রান্স দেখে নাও, ভালোবাসার ফুল ফোটাচ্ছেন মেসি

দিবাকর বিশ্বাসঃ

প্রাচীন রোমের যে ভ্যালেন্টাইনকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীতে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করা হয়, তিনি কখনো ফ্রান্সে পা রেখেছিলেন কিনা কে জানে? তবে প্যারিসকেই বলা হয় ভালোবাসার শহর। অথচ কি আশ্চর্য সেই ভালোবাসার শহর প্যারিসেই কিনা ভালোবাসা পাননি মেসি।

নিজের ফুটবল আতুর ঘর বার্সেলোনাকে চোখের জলে বিদায় দিয়ে তিনি যখন ফ্রান্সে যান মেসি বরন ভালোভাবেই
হয়েছিলো। কিন্ত বাকিটা যে হতাশার গল্প। স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জোকে নিয়ে যতই আইফেল টাওয়ারের সামনে হাস্যজ্বল পোজ দেননা কেন, বাস্তবতা হচ্ছে প্যারিসে মেসি ভালোবাসাহীন একটি জীবন কাটিয়েছেন। বার্সেলোনাতে মেসিকে প্রাপ্য সম্মান দেয়া হত, তাকে কেন্দ্র করেই পরিকল্পনা সাজিয়ে সবাই খেলত, ফলাফলও পেত নগদে।

কিন্তু হায়! ফ্রান্সে যে ঘটল ঠিক তার উল্টোটা। বার্সায় মেসির যে কতৃত্ব ছিলো সেটা তাকে দেয়া হয়নি, বার্সায় তাকে কেন্দ্র করে যে রন পরিকল্পনা সাজানো হত ফ্রান্সে তা হয়নি। বরং ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতার পর পিএসজিতে মেসিকেই দুয়ো দিত দর্শকরা । ফরাসি অহম ফাইনালের পরাজয় হজম করলে পারলে তো? মেসি অপেক্ষা ক্লাবের এমবাপ্পেকে বেশি প্রাধান্য দেয়া, বাচ্চাদের প্যারিসের পরিবেশে খাপ খাইয়ে না নিতে পারা, সব মিলিয়ে প্যারিসের জীবনটাকে ঠিক উপভোগ করতে পারেননি মেসি। এর প্রভাব পড়েছে খেলাতেও। অতপর : বাস্তব জীবনে নেমে এলো হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের লাইন…

” আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেকে “।

ডেভিড বেকহ্যামের ডাকে মেসি চলে এলেন আমেরিকায়।।
ইন্টার মিয়ামিতে ভালোবাসার দেবী আফ্রোদিতি যেন স্বয়ং ভর করেছে মেসির ওপর। প্যারিসে যে মেসি ভালোবাসার অভাবে ভুগেছেন, আমেরিকার রাস্তায় সেই মেসি তার ভক্তকে গাড়ির ভেতর থেকে দেন ভালোবাসার চুমু । বাচ্চাদের সাথে সুপারহিরোর মুভি দেখে গোল করে করেন সুপার হিরোর উদযাপন। যে রুক্ষ আমেরিকানরা সব সময় পৃথিবীর সর্বত্র অন্যকে ডমিনেট করতে চায়, সেই আমেরিকানরা ডমিনেটিং ক্যারেক্টার ভুলে মজেছে মেসির স্নিগ্ধ শিল্পতে। জন্মলগ্ন থেকে আমেরিকায় যে ফুটবল দলটি সব সময় শেষের দিকে ছিলো মেসি আসার পর সেই দলটিই কিনা জিতল লিগস কাপে প্রথম শিরোপা। যে ফুটবল আমেরিকায় তেমন জনপ্রিয় ছিলোনা, মেসি আসার পর সেই আমেরিকানরা বেশি ডলার খরচ করে ছুটে আসছে স্টেডিয়ামে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা হেরেও খুশি মেসির সাথে একেই মাঠে খেলতে পারার সুযোগে! আমেরিকায় যেন নতুন করে ভালোবাসার চাষ করছেন মেসি!

প্যারিসে সিন নদীর ওপর প্রথম ফরাসি সম্রাট এর নামানুসারে ” পন্ট দে আর্টস ” সেতুতে মানুষ তালাবন্দী করে চাবি ফেলে দেয় নদীতে। চাবি নদীর জলে ফেলে দেওয়ায় ঐ চাবি দিয়ে যেহেতু আর তালা খোলার সুযোগ নেই, ফরাসিরা তাই বিশ্বাস করে এতে নাকি ভালোবাসা অমরত্ব পায়। যে ভালোবাসা নিয়ে ফরাসিদের এত আবেগ, হায়! সেই ফরাসিরা ফুটবলের বড় ভালোবাসাকেই রাখতে পারলোনা তাদের দেশে? এমনকি ভালোবাসাহীনতায় ভুগে প্যারিস ত্যাগ করেছেন নেইমারও!

ইন্টার মিয়ামিতে ৭ ম্যাচে ১০ গোল করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার পাশাপাশি মেসি ব্যক্তিগতভাবে এক সময়ের বার্সা সতীর্থ দানি আলভেজকে কাটিয়ে ৪৪ ট্রফি জিতে হয়ে গেলেন সর্বোচ্চ ট্রফি জেতা খেলোয়াড়ও! আর ফুটবলার মেসি ট্রফি নেওয়ার সময় সম্মান দেখিয়ে ইন্টার মিয়ামির আগের অধিনায়কের হাতে আর্মব্যান্ড বেধে দিয়ে, এক সাথে ট্রফি তুলে নিয়ে ব্যক্তি মেসি যেন নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন! ফুটবল সৌন্দর্যের সাথে ব্যক্তিত্বের এমন মেল বন্ধন কার কয়জনে পারে?

বিখ্যাত নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, মোনালিসা শিল্পকর্ম তার শোবার ঘরে টানিয়ে রাখতেন। ১৮২১ সালে নেপোলিয়নের মৃত্যুর পর ছবিটি লুভ্যর মিউজিয়ামে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ভিঞ্চির আকা মোনালিসা চুরি হয়েছিলো ১৯১১ সালের ২১ আগস্ট। ফরাসিরা ঘোষনা করে ছবির সন্ধান যে দিতে পারবে তাকে ৪০ হাজার ফ্রা দেয়া হবে। অবশেষে লুভ্যর মিউজিয়ামের কর্মচারী ভিনসেঞ্জা পেরুজ্জিয়ার ইতালির একটি হোটেলের খাটের নিচ থেকে মোনালিসার শিল্পকর্ম হারিয়ে যাওয়ার ২ বছর পর উদ্ধার করা হয়।

ভিঞ্চির শিল্পকর্ম মোনালিসাকে তবু উদ্ধার করে ইতালি থেকে আবার ফ্রান্সে ফিরিয়ে নেয়া গেছে, কিন্ত মেসি নামের যে ফুটবল শিল্পী প্যারিস থেকে হারিয়ে গেলো সেটা কি আর উদ্ধার করতে পারবে ফরাসিরা ? হায়! নেপোলিয়নের উত্তরসূরীরা বুঝলনা মেসি মাহাত্ম্য!

ওহে ফ্রান্স দেখে নাও, ভালোবাসা আর প্রাপ্য সম্মান পেলে মেসি কি করতে পারে। যারা মেসিকে দুয়ো দিতে তাদের কি একটু আফসোস হচ্ছে? তাদের আফসোস বাড়ুক। জীবনকে উদযাপনের লক্ষ্যে যে মানুষ সৌদির বড় অংকের টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে আমেরিকায় এসেছে তিনি জীবন আর ফুটবল এক সাথেই উপভোগ করুক। কে না জানে? মেসি যখন জীবনের সাথে ফুটবল উপভোগ করেন সেখানে
তিনি নতুন ভাবে লিখেন ফুটবলেন নতুন মহা কাব্য!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here