আসিফ ইকবাল খানঃ
১লা মে ২০১৭ সাল, নিজের ফেসবুকে পেইজে একটা পোষ্ট করেন ফুটবলার ওয়াহেদ আহমেদ,
“বাবা অনেক স্বপ্ন দেখতেন যেন আমি দেশের হয়ে ফুটবল খেলি। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে ফুটবল খেলা। বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি। লাল সবুজের পতাকার জন্য খেলেছি। অনেক ইচ্ছা ছিল দেশের ফুটবলকে ভালো কিছু দেয়ার। ইচ্ছাটা পুরোপুরিভাবে শেষ হলো না। পরিবারকে সময় দিতে ফুটবল থেকে অবসর নিচ্ছি।দেশের হয়ে খেলতে পারবো না এটা সত্যি কষ্টকর কিন্তু জীবন অনেক কঠিন। অনেক বেশি মিস করবো দেশের ফুটবলকে। ফুটবলার ওয়াহেদ হবার পিছনে যারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন, বিশেষ করে আমার পরিবার, কোচ, সতীর্থ আর আর আপনারা, সবাইকে অনেক বেশি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অনেক বেশি ধন্যবাদ জানাই সিলেটের সবাইকে। আপনাদের ভালোবাসা না পেলে এতত দূর আসতাম না। আমার এই সিদ্ধান্তে অনেকেই কষ্ট পাবেন আমি জানি। ক্ষমা করে দিবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন।ভালো থাকবেন।“
এই পোষ্টের মাধ্যমেই ক্যারিয়ারের ইতি টানেন মাত্রে ২৬ বছর বয়সেই। পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু করেছিলেনই ২০১১ সালে শেখ রাসেলের হয়ে, ২০১৩ তে মোহামেডানে যোগ দিয়ে তাদের এনে দেন কোটি টাকার সুপার কাপ যেই টুর্নামেন্ট এ গুরুত্বপূর্ন ৩ গোলও করেছিলেন তিনি। সেই থেকে যাত্রা শুরু। ২০১৪ সালের প্রিমিয়ার লীগে হয়েছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার। মোহামেডানের হয়ে ভালো খেলার সুবাদে জাতীয় দলেও ডাক পেয়ে যান, নেপালের বিরুদ্ধে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে অভিষেকও হয় এই ফুটবলারের। তবে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামার সূযোগ তেমন হয়নি, লীগে ভালো খেললেও বসে থাকতে হয়েছিল সাইড বেঞ্চে।
২০১৫ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন লালসবুজ জার্সিতে নিজের শেষ ম্যাচ। ক্যারিয়ারের শেষ দুই মৌসুমে ছিলেন ঢাকা আবাহনীতে কিন্তু সুবিধা করতে পারছিলেন না সেখানে আবাহনীর বিদেশী ফুটবলার প্রীতির কারনেই বেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। অবসর নেওয়ার সময় বলেছিলেন কারো প্রতি ক্ষোভ নেই তার এটা নিজের পরিবারের জন্যই নেওয়া সিদ্ধান্ত।
তবে এতদিন পর অবসর নিয়ে মুখ খুললেন ওয়াহেদ। ক্রিকেট বিশ্বকাপ এর বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দেখতে মাঠে গিয়েছেন ক্রিকেটের এই পাড় ভক্ত সেখানেই বাংলাদেশের এক সাংবাদিকের কাছে বললেন নিজের অভিমানের কথা। ওয়াহেদ বলেন,
‘তখন একটা প্লেয়ার ছিল আবাহনীতে ও কিন্তু ন্যাশনাল টিমেও খেলত তখন আমি চিন্তা করলাম আমি গোল করলাম আমি সব ম্যাচ খেললাম এবং আমি ওর থেকে বেটার তাও আমি সূযোগ পাচ্ছি না, এর মানে কি? কিছু একটা আছে দলের মধ্যে।’
এর মাধ্যমে দলের মধ্যে চলা রাজনীতিকেই হয়তো ইঙ্গিত করেছেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার। এই রাজনীতির কারনেই ফুটবল থেকে মন উঠে যায় তার। যার কারণে শুধু ফুটবলটাই ছাড়েন নি, ছেড়েছেন দেশটাও। তবে ফুটবল ছাড়লেও যে ফুটবলকে ভুলে গেছেন তা কিন্তু নয় নিয়মিত ফুটবলের খোঁজ খবর রাখেন ফুটবল খেলে যেই বন্ধু পেয়েছিলেন তাদের সাথেও রয়েছে যোগাযোগ। আশা করেন নিজের সাথে যা হয়েছে অন্য কোন ফুটবলার এর সাথে এমন না হউক।
ক্রিকেট কিংবা ক্রিকেটারদের সাথে ওয়াদের সখ্যতা পুরনো। কারণ, ফুটবলার হওয়ার আগে সিলেটের ছেলে ওয়াহেদ ছিলেন পুরোদস্তুর ক্রিকেটার। খেলেছেন সিলেটের বিভাগীয় লীগেও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দেখতে গিয়ে তাই স্মরণ করিয়ে দিলেন নিজের পুরনো পরিচয়।
‘ক্রিকেটারদের সাথে পরিচয় ক্রিকেট থেকেই। আমি কিন্তু সিলেটের ডিভিশন লীগেও খেলেছি। অনেক ভালোবাসি ক্রিকেটকে।’